দ্বীপাঞ্চলে কিভাবে গভীর সাগরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়?

Special Childs Care-adds
দ্বীপাঞ্চলে কিভাবে গভীর সাগরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়?

দুই বছর আগের কথা। আমার এক কাজিনের সাথে সন্দ্বীপ বেড়াতে গিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে আমার কাজিন রীতিমত অবাক। সেখানে ১১ কিলোভোল্টের H-টাইপ বৈদ্যুতিক পোল বসানো আছে এবং পরিবাহী তারের সংযোগগুলো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। আমার কাজিন এমনিতেই অনেক কৌতূহলী ছেলে তার উপর তড়িৎ প্রকৌশলের ছাত্র। তাই কৌতূহল যেন আরো বেড়ে গেল।

সে প্রশ্ন করে বসল, “এই দ্বীপাঞ্চলে কিভাবে পোলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে?” দ্বীপাঞ্চলে কিভাবে গভীর সাগরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়? তার সাথে শেয়ার করা উত্তরটি আজ আপনাদের কাছে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব। চলুন শুরু করা যাক।

এক কথায় বলে ফেললে, এই অভূতপূর্ব কাজটি সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের সাহায্যে করা যায়। যৌক্তিকভাবে প্রশ্ন আসেই যে, সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল কি এবং কিভাবে এই ক্যাবলের সাহায্যে হাজার হাজার ভোল্ট দ্বীপাঞ্চলে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে? প্রথমে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল মহাশয়ের পরিচয়টা আপনাদের নিকট তুলে ধরতে চাই।

সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল হল এক প্রকার পাওয়ার ট্রান্সমিশন ক্যাবল যার মাধ্যমে পানির গভীরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা সম্ভব। “সাবমেরিন” শব্দের অর্থ হল জলের নীচে। আর এই ক্যাবলটি নদী, লেক, সাগরের নীচে পাতানো থাকে। তাই পাওয়ার ক্যাবল শব্দযুগলের সাথে সাবমেরিন শব্দটি যুক্ত হয়ে হল সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল। যেসব দেশে সাগরের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয় সেসব দেশে এই ক্যাবল বহুলভাবে প্রচলিত।

গঠন প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত লিখে আর্টিকেলটিকে বোরিং করা ইচ্ছে আমার নেই। শুধু এতটুকু বলব, সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল তিন কোর কপার বা এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টরবিশিষ্ট এবং ক্রস লিংকড পলিথিন (XLPE) ইন্সুলেশন লেয়ার দিয়ে তৈরি। এতে একটি অয়েল চ্যানেলও থাকতে পারে যেন ওভারহিটিং অবস্থায় ক্যাবলটি ঠান্ডা হতে পারে। তবে ক্যাবল নষ্ট হবার চিন্তার দরুণ এই চ্যানেল খুব কম ব্যবহার করতে দেখা যায়।

এবার নিশ্চয় সবার মনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে যে, এই ক্যাবলের সাহায্যে কত ভোল্টেজ সঞ্চালন করা সম্ভব?

সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে ৩৩ কিলোভোল্ট থেকে ৫০০ কিলোভোল্ট পর্যন্ত পাওয়ার ট্রান্সমিশন সম্ভব। এই ক্যাবলের সাহায্যে হাই ডিসি ভোল্টেজও সরবরাহ করা সম্ভব।

সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের সাহায্যে কিভাবে দ্বীপাঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়?

জাতীয় গ্রীড সাবস্টেশন থেকে ৩৩-৫০০ কিলোভোল্ট লাইন জলের গভীরে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের সাহায্যে দ্বীপাঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হয়। এখন এত উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ আমরা সরাসরি ব্যবহার করতে পারব না। তাই দ্বীপাঞ্চলে একটি সাবস্টেশন স্থাপন করা হয় যা গ্রীড থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মধ্যে দিয়ে আসা হাজার লক্ষ ভোল্টকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় এনে গ্রাহকদের ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।

বিদ্যুৎ সঞ্চালিত
Image credit Google: বিদ্যুৎ সঞ্চালিত

বাংলাদেশে কি সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের সাহায্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়?

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের সাহায্যে ১০৩০ টি প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে যার মাধ্যমে ২.৫ লক্ষ ফ্যামিলি উপকৃত হচ্ছে। এই লাইনগুলো নদীর তলদেশে পাতানো রয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে, সন্দ্বীপ উপজেলাকে বিদ্যুতায়িত করতে সরকার সাগরের তলদেশে ১৫ কিঃমিঃ সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন করে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার চরাঞ্চলের ২০,০০০ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার পদ্মা নদীর তলদেশে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল প্রতিস্থাপন করেছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত এই লাইনের দৈর্ঘ্য ১ কিঃমিঃ।

এই ক্যাবলের সাহায্যে জল বিদ্যুতায়িত হবার কোন সম্ভবনা আছে কি?

উত্তর অনেকটাই জোর দিয়ে বলে যায় সম্ভবনা নেই। কারণ এতে হাই লেবেলের ইন্সুলেশন লেয়ার দেয়া থাকে। আর যদি লাইনে লিকেজও হয় তাহলে সেটা অটো-রিক্লোজারের সাহায্যে সেন্স করা মাত্রই বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাবে।

সাবস্টেশনে ঢুকতেই একটি এলার্ট সাইন চোখে পড়ল। সাইনটি ছিল এমন, “Don’t put long steps”। আমার এক বন্ধু ইলেকট্রিক্যালের বিষয়গুলো নিয়ে খুবই কৌতূহলী। সে এ সাইন এর ব্যাপারে জানতে চাইল। আজকে এই মজার টপিকটি নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

স্টেপ পটেনশিয়াল এবং টাচ পটেনশিয়াল যারা substation এ জব করেন এটা তাদের কাছে খুবই সুপরিচিত শব্দ।

এই দুটি পটেনশিয়াল এর দরুণ কারো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই টেকনিক্যাল বিষয় গুলো অনেকেরই জানা না থাকায় অহরহ দূর্ঘটনা ঘটেই চলছে। যারা সাবস্টেশন জব করেন তারাই ভাল জানেন যে এটা যেকোন সময় কত বড় জম হয়ে দাড়াতে পারে।

যখন সাবস্টেশন এ ফল্ট দেখা দেয় কিংবা খুব বড়সড় স্পার্কিং শুরু হয় তখন না জানার কারণে অনেকেই সেখানে বিনা দ্বিধায় বিচরণ করে থাকেন। এটা মোটেও উচিত নয়। এমতবস্থায় কাছে না ১০ মিটার দূরত্ব এ থাকলেও আপনি ঢলে পড়তে পারেন মৃত্যুর কোলে। কারণ সাবস্টেশন গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং ফল্ট কিংবা লিকেজ এর কারণে সেখানে বিশাল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হতে পারে।

এসময় ১০ মিটার রেঞ্জ পর্যন্ত surface area বিদ্যুতায়িত হবার প্রবল সম্ভবনা থাকে। এমতবস্থায় আপনি যদি রেঞ্জের ভেতরে থাকেন তাহলে আপনার দুই পা সেক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোড/পরিবাহীর এর ন্যায় আচরণ করবে। আর দুই পায়ের মধ্যে যে ভোল্টেজ পার্থক্য তৈরি হবে তাকে বলা হচ্ছে step potential. Simply, voltage difference between two foot steps.

আবার আপনি ঐ সময় যদি faulted কোন structure কিংবা instrument touch করে ফেলেন তখন আপনার হাত & পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে ভোল্টেজ সৃষ্টি হবে। যাকে বলা হয় touch potential. শুধুমাত্র সাবস্টেশন ই নয়। আবাসিক এলাকায় ইলেক্ট্রিক্যাল টাওয়ার ফল্ট কিংবা ছিড়ে পড়া তার থেকেও আপনি এটার শিকার হতে পারেন।

©ইকবাল মাহমুদ ভাই চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ।

Affiliate Disclosure We are affiliated with several companies. When you purchase any referred product, we get a small commission. It does not charge you anything extra, but we get a small percentage.
Special Childs Care-adds