Myanmar এ সামরিক শাসন উৎখাত হয়ে গণতন্ত্র আসার পর থেকেই ২০১২/১৩ সালের দিক থেকে পর্যটক বাড়তে শুরু করে । ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হয়। এশিয়া ছাড়াও আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া থেকেও পর্যটক আসছে মিয়ানমারে। বাংলাদেশি বৌদ্ধদের তীর্থভ্রমনের জন্য ভারতের পরেই মিয়ানমারের অবস্থান। বাংলাদেশের সাথে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশি সাধারণ পর্যটকদের জন্যও মিয়ানমার হয়ে উঠেছে এক নতুন গন্তব্য।
যদিও বেশ কিছুকাল ধরেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জাতিগত বিরোধ চলছে তার কোন প্রভাব দেখা যায় না মিয়ানমারের পর্যটন এলাকাগুলোতে। পুরো Myanmar জুড়েই সব জাতিসত্তা ও সব ধর্মের সহাবস্থান। প্যাগোডা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই ভ্রমনের আকর্ষণ, ইয়াঙ্গুনেই চোখে পড়বে একই এলাকায় বৌদ্ধ-মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান বসবাসের পাশাপাশি প্রচুর বৌদ্ধদের প্যাগোডা, মুসলিমদের মসজিদ, হিন্দুদের মন্দির এবং খ্রিস্টানদের গির্জা। রাখাইনে বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ।
মায়ানমার ভ্রমণ ২০২০
মিয়ানমারের আনুষ্ঠানিক নাম হল “মিয়ানমার প্রজাতন্ত্র” এর পুরোনো নাম বর্মা বা বার্মা প্রাচীন নাম ব্রহ্মদেশ নামে পরিচিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। তৎকালীন বার্মার গণতান্ত্রিক সরকারের উৎখাতের পর ১৯৮৯ সালে সেখানকার সামরিক সরকার বার্মার নতুন নামকরণ করে “মিয়ানমার” এবং প্রধান শহর ও তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নাম হয় “ইয়াঙ্গুন”। ২১ অক্টোবর ২০১০ থেকে দেশটির জাতীয় সঙ্গীত ও নতুন জাতীয় পতাকা প্রবর্তন করা হয়। সুদীর্ঘ সামরিক শাসনের ইতি ঘটিয়ে ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
মিয়ানমারের মোট আয়তন ৬৭৮,৫০০ বর্গকিলোমিটার (২৬১,৯৭০ বর্গমাইল)। উত্তর-দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,০৮৫ ও পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ বিস্তার প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার । মায়ানমারের পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এবং ভারতের মিজোরাম, উত্তর-পশ্চিমে ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুর অবস্থিত। মায়ানমারের সীমানার উত্তর-পূর্বাংশের ২,১৮৫ কিলোমিটার জুড়ে আছে তিব্বত এবং চীনের ইউনান প্রদেশ। দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে লাওস ও থাইল্যান্ড। দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সাথে মায়ানমারের ১,৯৩০ কিলোমিটার উপকূল রেখা রয়েছে। উত্তরের অপেক্ষাকৃত শীতল এলাকায় গড় তাপমাত্রা ২১ °সেলসিয়াস। উপকূলীয় ও ব-দ্বীপ এলাকায় গড় তাপমাত্রা ৩২° সেলসিয়াস।
প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর বৌদ্ধ প্যাগোডা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই বিশ্ববাসীকে এখানকার পর্যটনে আকর্ষণ করে। ইয়াঙ্গুন, বাগান, মান্দালয়, নেপিডো, ইনলে লেক ও নেগপালি সৈকত পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।
মায়ানমার ভ্রমণ ২০২০
মায়ানমার দেশটি মূল মিয়ানমার অঞ্চল এবং আরও সাতটি রাজ্য নিয়ে গঠিত। এগুলি হল চিন, কাচিন, কারেন, মন, রাখাইন, এবং শান। মূল মিয়ানমার সাতটি বিভাগে বিভক্ত – ইরাবতী, মাগোয়ে, ম্যান্ডালে, পেগু, রেংগুন, সাগাইং, এবং তেনাসসেরিম।
মায়ানমারের রাজধানী “নেপিডো” যার অর্থ “রাজাদের আবাসভূমি”। ২০০২ সালে দেশের প্রাক্তন রাজধানী রেঙ্গুন বা ইয়াঙ্গুন থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে নেপিডো শহরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে নেপিডোকে মায়ানমারের রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়। শুরুর দিকে নেপিডোতে শুধু কিছু সরকারী ভবন, বিলাসবহুল হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ও একটি বিমানবন্দর ছাড়া আর তেমন কিছুই ছিল না। এখানে মূলত সরকারী কর্মচারীরা বাস করতেন। তাদের পরিবার অবশ্য রেঙ্গুনেই বাস করত, কেননা নেপিডোতে বিপণী বিতান, রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য সেবা তেমন সুলভ ছিল না। তবে শহরে সার্বক্ষণিক অব্যাহতভাবে বিদ্যুৎসেবা পাওয়া যায়, যা মায়ানমারের অন্য শহরের জন্য বিরল। নেপিডোর বিমানবন্দরটি মূলত সামরিক বাহিনীদের সদস্যদের পরিবহনের কাজেই ব্যবহৃত হয়। শহরটি রেঙ্গুন থেকে সড়কপথে ও রেলপথে (পিনমানা হয়ে) সংযুক্ত। ২০১২ সালে শহরটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।
নেপিডো শহরটি সম্পূর্ণরূপে পূর্বপরিকল্পিত একটি শহর, উইকিপিডিয়া অনুসারে এই শহর অনেকটা অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা ও ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়া শহর দুইটির মত। এখানে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের বাস। প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরীটি বিশাল, এমনকি আকারে এটি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন শহরেরও চার গুণ বড়, কিন্তু এর জনঘনত্ব খুবই কম (প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ১৩১ জন)।
নেপিডোতে মায়ানমারের সরকারের কার্যালয়সমূহ, আইনসভা, সর্বোচ্চ আদালত, রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ, মায়ানমারের মন্ত্রীসভার সরকারী বাসভবন, মায়ানমারের মন্ত্রণালয়সমূহের সদর দফতর ও মায়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।
উপ্পাতাসান্তি প্যাগোডা বা শান্তি প্যাগোডা শহরটির একটি দর্শনীয় স্থান। যেখানে বুদ্ধের দাতের সংরক্ষিত স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষন করা আছে আছে। এটি আকারে প্রায় মায়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের “শোয়েডাগন প্যাগোডা”-র মত যার উচ্চতা ৯৯ মিটার (৩২৫ ফুট)। এই প্যাগোডা “শোয়েডাগন প্যাগোডা” থেকে মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার ছোট।
এই প্যাগোডাটি একেবারে নতুন স্থাপিত। এর নির্মানকাজ শুরু হয় ২০০৬ সালের ১২ই নভেম্বর এবং শেষ হয় ২০০৯ সালের মার্চ মাসে। এই প্যাগোডাটি মায়ানমারের রাস্ট্রীয় শান্তি ও উন্নয়ন পরিষদের প্রধান থান শো’র অধীনে নির্মিত হয়। এখানকার শ্বেত হস্তী পর্যটকদের আকর্ষনের বস্তু।
এখানে আছে বুদ্ধগয়ার আদলে তৈরি ও সম মর্যাদায় পূজিত স্থাপনা। এ নিয়ে পরের কিস্তিতে লিখবো।
চলবে……(পর্ব – ২)
(উইকিপিডিয়া উন্মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে তথ্য)
Darun Travels: +8801713384190 +8801824416666