Golden Truth

স্বপ্ন যখন “ইউরোপ” এর পথে……..১ম পর্ব

বাংলাদেশীদেরকে বিদেশীরা কিভাবে মূল্যায়ন করে

প্রথম পর্ব: ইউরোপের বলকান দেশে…

এই লেখা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা স্বপ্ন দেখেন সঠিক পথে ইউরোপের বলকান দেশ গ্রীস, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো, সার্বিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরিসহ বিদেশে চাকরিসহ ভিসা নিয়ে যাবার এবং যারা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়তে যাবেন পার্ট টাইম চাকরিও করবেন এই আাশায়।

পূর্বের পর্বগুলো ধারাবাহিক ভাবে পড়ে নিলে বুঝতে সুবিধা হবে। ধারাবাহিক ভাবে লিখেছেন; সম্মানিত ব্যারিষ্টার মহোদয়গণ, ইমিগ্রেশন আইনজীবীগণ এবং প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ব্যারিস্টার জুবায়ের আহমেদ স্যার।

প্রায় দেড় মাস ধরে ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ছুটে বেড়ানোর পর গতকাল থেকে একটু রিল্যাক্স এ আছি। সে কারণে চিন্তা করলাম আবার ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে নিজেরদের অভিজ্ঞতা গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করি। উপসালা ইউনিভার্সিটির জন্য বিখ্যাত সুইডেনের উপসালা শহরে বসে যখন এই লেখা লিখছি, তখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। পুরো শহর ঘুমে, কারণ কালকে সকালে সবাইকে কাজে যেতে হবে। আমারদের` যে সকালে কাজ নেই তাই এই পোস্ট লেখা। গত দেড় মাসে গড়ে প্রতিদিন ৩টা করে প্রায় ১০০+ কোম্পানির সাথে মিটিং করেছি, বিভিন্ন দেশের এবং শহরের। সেই অভিজ্ঞতাগুলোই আপনাদের সাথে এখানে শেয়ার করছি। ধৈর্য ধরে পড়লে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

স্বপ্ন-যখন-ইউরোপ-এর-পথে
Image credit Google: Bolkan Countries

১. প্রিষ্টিনা, কসোভো:- গত বছর যখন বাংলাদেশে আমরাই প্রথম কসোভো নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম অনেকেই হাসাহাসি করেছিল। আমাদের পোস্টে যারা হা হা রিয়েক্ট দিয়েছিল আজকে তারাই হয় যেতে চায় অথবা এখন নিজেরাই কাজ করছে কসোভো নিয়ে। যাইহোক, বাংলাদেশীদের জন্য যেমন নতুন দেশ তেমনিভাবে ওদের কাছেও আমরা নতুন। ওদের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের দেশের সৈনিকরা অংশগ্রহণ করেছিল সেই কারণে আমাদেরকে অন্যভাবে দেখে। তাছাড়া ওদের কাছে আমাদেরকে খাঁটি মুসলিম মনে হয় এজন্য আলাদা একটা সম্মান করে। এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত কোম্পানির সাথে কথা হয়েছে তারা সবাই পজেটিভ আছে। বাংলাদেশী টাকায় ৬০-৭০ হাজার টাকার বেশি ইনকাম না হলেও থাকা খাওয়া ফ্রি পাওয়া যাবে। সুতরাং আপনার খুব বেশি একটা কষ্ট হবে না। আবহাওয়া এবং খাবার ভালো হয় আরামসে থাকতে পারবে। আর মালিকরাও যেহেতু আপনার সাথে ভদ্র আচরণ করবে সুতরাং কোন সমস্যা নেই। এখান থেকে যারা গেম মারার উদ্দেশ্যে আসবে তাদেরকে আগেই বলে যেতে চাই এখান থেকে গেম মারাটা একটু কঠিন। আপনাকে বর্ডার ক্রস করে সার্ভিয়া গিয়ে গেমের জন্য লোক ঠিক করতে হবে। সুতরাং যারা গেম মারার জন্য আসবেন তারা এসে বিপদে পড়বেন। যারা থাকার এবং কাজ করার জন্য আসবেন তাদের কোন সমস্যা আমরা এখানে খুঁজে পাইনি।

২. বেলগ্রেড, সার্বিয়া:- সারভিয়ান কোম্পানির মালিকদের কাছে আমরা হচ্ছি সুযোগ সন্ধানী। সুযোগ পেলেই আমরা পালিয়ে যাব এটা খুব ভালো করেই তারা জানে। গেম মারার জন্য সার্ভিয়া হচ্ছে মোটামুটি স্বর্গ। ‌ বেলগ্রেডের রাস্তাঘাটে আপনি গেমের দালালদের ঘোরাঘুরি করতে দেখবেন!!! এমনকি আপনাকে রাস্তায় ডাকবে ভাই গেম লাগবে কিনা বলেন?? আমরা বেশ কিছু গেমের দালালদের সাথে কথা বলেছি তারা আমাদেরকে দেখিয়েছে এবং প্রমাণ করে দিয়েছে তারা এটা করতে পারে। আমাদের সামনে কয়েকজন ভাই তাদের সেবা নিয়েছেন এবং ঠিকঠাক মতো পৌঁছেছেন পরবর্তীতে আমাদের সাথে কথা হয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বর্তমানে সার্বিয়ার কোন কোম্পানি সহজে আপনাকে নিতে চাইবে না। হাতে পায়ে ধরে দু একটা কোম্পানিকে রাজি করানো গেলেও তারা সবাই অন্তত তিন মাস কাজ করবে এরকম নিশ্চয়তা চায়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যারা গিয়েছেন তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছে কোম্পানির মালিকরা এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে বসবাসের জন্য সার্বিয়া খুবই ভালো। উন্নত বিশ্বের সকল সুবিধা এখানে বিদ্যমান। তুলনামূলক বেতন ভালো। যারা কাজ করছেন তারা কমবেশি ৮০ থেকে ১ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারছেন।

৩. রোমানিয়া: রাজধানী বুখারেস্ট এবং আশেপাশের শহরগুলোতে বাংলাদেশীদেরকে তারা বাস্টার্ড হিসেবে চিনে। বিভিন্ন মালিকের সাথে বিভিন্ন অপকর্মের কারণে মোটামুটি রাজধানী এবং আশেপাশের অঞ্চলে কোন মালিক বাংলাদেশীদের কে নিতে চায় না, এমনকি অনেকেই বাংলাদেশের নামও শুনতে চায় না। এরমধ্যে কিছু ব্যতিক্রম আমরা পেয়েছি। বেশ কিছু বাঙালি ওখানে কাজ করছে অত্যন্ত সুনামের সাথে এবং সেই সমস্ত কোম্পানিতে এখনো বাংলাদেশী লোক নিতে আগ্রহী। তবে রাজধানী থেকে দূরে বিভিন্ন শহরে যেমন তিমিছাড়া, আরাদ, বিহোর,ল্যআসই, ডেকান ইত্যাদি শহরে এখনো বাংলাদেশিদের সম্পর্কে তাদের খারাপ ধারণা হয় নাই। এখনো পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ থেকে লোক নিতে আগ্রহী। আপনারা মনে করতে পারেন কেন আগ্রহী? কারণ একটাই কম বেতন! আপনাকে ৪৫০-৫০০ ইউরো বেতন দিলে আপনি কাজ করবেন কিন্তু কোন রোমানিয়ান সাড়ে সাতশোর নিচে কাজ করবে না। সুতরাং যারা হায় হুতাশ করছেন বর্তমানে ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে দেখতে পাচ্ছি। তাদেরকে বলবো বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে এখানে প্রচুর লোকের প্রয়োজন। তাদের প্রয়োজনেই আপনাকে নিবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না বুখারেস্ট এর মত অন্যান্য শহরে আমাদের অবস্থান খারাপ হয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি রোমানিয়া যেতে পারবেন টেনশনের কোন কারণ নেই। ধৈর্য ধরে নিশ্চিন্ত অপেক্ষা করুন ইনশাআল্লাহ ভিসা পাবেন। যেহেতু বদনাম হয়েছে সে কারণে কিছু ভিসা মিস হবে এটাই স্বাভাবিক।

৪. বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরি:- হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা রয়েছে। কারণ আগে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সাথে সাথে ডিপোর্ট করে দেয়া হতো। সেই কারণে আগে যারা এসেছিলেন তারা মোটামুটি ভাবে সেটেল হয়েছেন (দুই চারজন বাদে), আর নতুন করে যারা আসছেন তারাও কম বেশি থাকার নিয়তেই আসতেছে। সুতরাং হাঙ্গেরিতে আমাদের অবস্থান খুবই ভালো। যারা এসেছেন তাদের সাথে কথা বলে যেটা বুঝতে পারলাম তাদের একটাই অভিযোগ বুদাপেস্ট শহরে রেস্টুরেন্ট ছাড়া আর কোন কাজ নেই। থাকলেও সেটা হাতে গোনা বেশিরভাগ কাজ শহর থেকে ৩০০-৫০০ কিলোমিটার দূরে। সে কারণেই বন্ধের দিনগুলোতে তাদের খারাপ লাগে। এই একটি সমস্যা ছাড়া এখনো পর্যন্ত কোনো সমস্যা খুঁজে পাইনি। এখানে বেতন যথেষ্ট ভালো সে তুলনায় খরচ অনেক কম। মোটামুটি এক থেকে দেড় লাখ ইনকাম করতে পারছেন যারা কাজে আছেন। সবাইকে অনুরোধ করব এই বাজারটা যেন সহজে নষ্ট না হয় এই জন্য আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা জরুরি।

Image credit Google: অবৈধভাবে পালানো মানে, সব হারিয়ে দেশে ফেরত।

৪. এথেন্স, গ্রীস:- এখানে বাংলাদেশীদের কে সবাই Illegal Migrant বা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চেনে। কারণ যারা তুর্কি হয়ে গেম মারে তারা অনেকেই এখানে ঢুকে পড়ে। যেহেতু ওই দেশের সরকার বাংলাদেশীদের কে বৈধতা দেওয়ার এবং নতুন করে লোক নেয়ার জন্য সরকারি চুক্তি করেছে সেই কারণে ঐখানকার মালিকরা বর্তমানে বাংলাদেশীদের নিতে আগ্রহী। প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার নার্স মেকানিক কনস্ট্রাকশন এগ্রিকালচার ফিশারিজ সব সেক্টরে প্রচুর লোক নিবে। বর্তমানে যারা অবৈধ অভিবাসী আছেন তাদের সাথে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি মোটামুটি তারা অবৈধভাবে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন। তারা আমাদেরকে বলেছে কাগজপত্র থাকলে দেড় থেকে দুই লাখ ইনকাম করা সম্ভব। তবে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে মোটামুটি এক লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন এটা নিশ্চিত। সুতরাং যারাই এখন আসবেন আশা করি বাজার ধরে রাখবেন অন্য জায়গায় পালিয়ে না গিয়ে আরামে সেখানে কিছুদিন কাজ করে যে টাকা পয়সা গুলো খরচ করে এসেছেন সেগুলো বাবা-মা বা অভিভাবককে ফেরত দেয়ার পর অন্য দেশে যাওয়ার কথা চিন্তা করবেন।

বিস্তারিত জানুন- গেম মারা কি???

৫. জাগ্ররেব, ক্রোয়েশিয়া:- সম্প্রতি সেনজেন হওয়া এই রাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের অবস্থান কিছুটা দুর্বল। মোটামুটি অর্ধেক মানুষ পালিয়ে যাওয়ায় একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে মালিক এবং ইমিগ্রেশনে। যেহেতু কিছু লোক কাজ করছে তাই তারা বলতে পারছে না সবাই পালিয়ে গেছে। আবার যেহেতু কিছু লোক পালিয়ে গেছে তাই তারা এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না আপনি থাকবেন। মোটামুটি মাঝামাঝি অবস্থানে অবস্থান করছে ওই দেশের ইমিগ্রেশন এম্বাসি এবং মালিকপক্ষ। বিভিন্ন মালিক ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও আইনজীবীগণের সাথে কথা বলে যেটা বুঝতে পেরেছি তা হচ্ছে যারা দক্ষ কর্মী তারা মোটামুটি থেকে যায়। বিশেষত যারা জিসিসি অর্থাৎ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, দুবাই এই সমস্ত জায়গা থেকে আসে তারা মোটামুটি থাকে। সুতরাং ওই সমস্ত দেশ থেকে ভালো পরিমাণে ভিসা দেয়া হবে। আর বাংলাদেশ থেকে যারা আবেদন করবেন তাদের বিষয়ে একটা সন্দেহ তো থাকবেই তারপরও ঠিকঠাকমতো ফাইল সাবমিট করতে পারলে মোটামুটি ভিসা পাবেন আশা করা যায়। বাজার এখনো নষ্ট হয়নি সুতরাং আশা করব নতুন করে যারা আসছেন তারা আর পালিয়ে না গিয়ে এখানে অবস্থান করুন, কারণ এই দেশ সেনজেন হয়ে গেছে সুতরাং কয়েকদিন অপেক্ষা করে রেসিডেন্ট কার্ড নিয়ে আরামসে পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইতালি যেতে পারবেন সুতরাং অবৈধভাবে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

স্বপ্ন যখন ইউরোপ (২য় পর্ব)

Affiliate Disclosure We are affiliated with several companies. When you purchase any referred product, we get a small commission. It does not charge you anything extra, but we get a small percentage.
Exit mobile version